আরবি কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম
বিবাহ হচ্ছে ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা সকল
নবী-রাসূলের সুন্নাত। এটি কেবল একটি সামাজিক বন্ধন নয়, বরং শান্তি,
স্থিতিশীলতা এবং দ্বীনের অর্ধেককে পূর্ণ করার মাধ্যম। বিয়ের তারিখ নির্ধারণের
ক্ষেত্রে অনেক মুসলিমের মনে প্রায়শই একটি প্রশ্ন জাগে যে,
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে আরবি কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম এবং কল্যাণকর?
বিশেষত, কিছু মাসকে ঘিরে প্রচলিত শুভ-অশুভ ধারণা বা প্রথাগুলো শরীয়তে কতটা
গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই আলোচনায় আমরা দেখব যে
ইসলামে বিয়ের জন্য কোনো মাস নির্দিষ্ট করা হয়েছে কি না, এবং রাসূলুল্লাহ
(সা.)-এর সুন্নাহর আলোকে কোন মাসকে বিশেষভাবে বরকতময় বলে মনে করা হয়।
সূচিপত্রঃ আরবি কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম
ইসলামে বিবাহের প্রচলন
আল্লাহ তাআলা আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হাওয়া (আ.)-কে তাঁর জীবনসঙ্গীরূপে
সৃষ্টি করেন এবং তাঁদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই
ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান। মূলত, বিবাহ শুধুমাত্র একটি সামাজিক চুক্তি
নয়, বরং আল্লাহর একটি নিদর্শন এবং নবী-রাসূলদের সুন্নাত।
বিবাহের গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
বিবাহ শুধু একটি সামাজিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি মহান আল্লাহর একটি বিশেষ
নিদর্শন। কোরআনুল কারীমে আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
"আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।" (সূরা আর-রূম, আয়াত ২১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহকে ঈমানের অর্ধেক হিসেবে
আখ্যায়িত করেছেন এবং সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে দ্রুত বিবাহ করার নির্দেশ
দিয়েছেন।
আরবি কোন মাসে বিয়ে করা উত্তম?
বিয়ে একটি বরকতপূর্ণ কাজ, যা ইসলামে সবসময়ই বৈধ ও কল্যাণকর। ইসলামে নির্দিষ্ট
কোনো মাস, দিন বা সময়ে বিয়ে করার কথা বলা হয়নি। বছরের যেকোনো সময়ে, যেকোনো
দিন বিয়ে করা সুন্নতসম্মত।
ইসমালিক দৃষ্টিকোণ হতেঃআল্লাহর সৃষ্ট দিন, মাস বা সময়—কোনোটাই জন্মগতভাবে অশুভ
বা খারাপ নয়। বছরের যেকোনো দিন বা মাসেই কল্যাণকর কাজ হিসেবে বিবাহ সম্পন্ন
করা সম্পূর্ণ বৈধ ও সুন্নতসম্মত।
কিন্তু জাহিলি যুগের মানুষের বিশ্বাস ছিল—শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি করা অশুভ ও
অকল্যাণকর।
আসুন জেনে নেই , শাওয়াল মাসে বিবাহ করা কি আসলেই অশুভ নাকি উত্তম ?
শাওয়াল মাসে বিবাহ: অশুভ ধারণার খণ্ডন
জাহিলি যুগের মানুষের বিশ্বাস ছিল শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি করা অশুভ আর মুসলমানদের
মধ্যে প্রচলন ছিল শাওয়াল মাসে বিবাহ করা উত্তম । শাওয়াল মাসকে ঘিরে যে উত্তম
হওয়ার আলোচনা প্রচলিত, তার মূল ভিত্তি হলো উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.)-এর
একটি হাদীস। তিনি বলেন,
‘রাসুল (সা.) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন, শাওয়াল মাসেই বাসর করেছেন। তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে ভাগ্যবান স্ত্রী আর কে আছেন?’ (মুসলিম: ৩৩৫২)
মূলত, হযরত আয়েশা (রা.) তাঁর এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছিলেন জাহেলি যুগের সেই ভ্রান্ত কুসংস্কার খণ্ডন করার জন্য, যেখানে শাওয়াল মাসে বিয়ে করাকে অশুভ মনে করা হতো।
শাওয়াল মাস: কেন এটিকে উত্তম বলা হয়?
শাওয়াল একটি মর্যাদাপূর্ণ মাস। কোরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি। তবে
শাওয়াল মাসে বিয়ে করা সুন্নত বা মুস্তাহাব হিসেবে যে কথাটি প্রচলিত আছে, সেটির
কোনো ভিত্তি নেই। এই মাসে বিয়ে করার আলাদা কোনো ফজিলত-মর্যাদার কথা
কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়নি। মহানবী (সা.)-এর বিয়েগুলো বছরের বিভিন্ন মাসে
হয়েছে।
অনেকে শাওয়াল মাসে বিয়ে করা উত্তম মনে করলেও, এটি সুন্নাত নয় এবং এটি
বাধ্যতামূলকও নয়। যদি শাওয়াল মাসে বিয়ে করা সুন্নাত বা একমাত্র মুস্তাহাব
হতো, তবে তিনি তাঁর সব বিয়ে এই মাসেই করার চেষ্টা করতেন। তাই, এটি মনে রাখা
দরকার:
"শাওয়াল মাসে বিয়ে করা উত্তম, তবে অন্যান্য মাসে বিয়ে করাও সুন্নাতসম্মত
এবং এতে কোনো বাধা বা অকল্যাণ নেই।"
বিয়ের ক্ষেত্রে মাস বা দিনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো কল্যাণকর কাজে দ্রুত
এগিয়ে যাওয়া। রাসূল (সা.) বিয়েকে ঈমানের অর্ধেক আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি বিয়ে করল, সে ঈমানের অর্ধেক পূর্ণ করল। অতএব, বাকি অর্ধেকে
সে যেন আল্লাহকে ভয় করে। (সহিহুল জামে, হাদিস : ৬১৪৮)।
কখন বিয়ে করা উচিত?
আমাদের আলোচনার সারমর্ম এই যে, ইসলামে বিবাহের জন্য কোনো মাস বা দিনকে
নির্দিষ্টভাবে উত্তম বা অশুভ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। আল্লাহর পক্ষ থেকে
প্রতিটি সময়ই কল্যাণকর। শাওয়াল মাসকে ঘিরে প্রচলিত উত্তম হওয়ার ধারণাটি মূলত
জাহেলি যুগের কুসংস্কার দূর করতে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহর প্রতি ইঙ্গিত করে।
মনে রাখতে হবে, রাসূল (সা.) বলেছেন, "যখন তোমাদের নিকট এমন কেউ বিবাহের
প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার দ্বীনদারী ও চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, তখন তার সাথে
বিবাহ দিয়ে দাও। যদি তা না করো, তবে পৃথিবীতে বড় ধরনের ফিতনা ও ব্যাপক
বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।" (তিরমিজি)
অতএব, মাস বা তারিখের তথাকথিত শুভ-অশুভ নিয়ে দ্বিধা না রেখে, যখনই সহজ ও
সুবিধাজনক মনে হয়, তখনই আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা করে এবং সুন্নাহর নীতি
মেনে বিবাহ সম্পন্ন করাই হবে প্রকৃত বরকতের কাজ।
আরও পড়ুন – আপনার বিবাহ সম্পন্ন, শুরু হলো নতুন পরিবারের সুন্দর যাত্রা!
এই নতুন বন্ধনকে আরও মজবুত করতে ঘুরে আসুন সবুজের স্নিগ্ধতায় ঘেরা শ্রীমঙ্গল।
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আর প্রশান্ত পরিবেশ আপনার সফরকে এনে দেবে খুশি ও
শান্তির ছোঁয়া।
শ্রীমঙ্গলের ভ্রমণ পরিকল্পনা, দর্শনীয় স্থান, থাকার ব্যবস্থা ও ভ্রমণ নির্দেশিকা
– সবকিছু জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের ভ্রমণ ও পর্যটন বিভাগে থাকা শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
পেজে ভিজিট করুন।
আর ঢাকায় থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পথ, সময়সূচি, আর কোন কোন জায়গা অবশ্যই দেখা উচিত – সেসব জানতেও এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।
আর ঢাকায় থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পথ, সময়সূচি, আর কোন কোন জায়গা অবশ্যই দেখা উচিত – সেসব জানতেও এখানে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়ে নিতে পারেন।



Very Useful post