সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নাকি দারুচিনীর দ্বীপঃ কোনটি এর আসল নাম এবং কেন !

 





সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হলো বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি দেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। 

এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিয়ানমারের উপকূল থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত। দ্বীপটির আয়তন তুলনামূলকভাবে কম (প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার), যা জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। 


ভ্রমণ সূচিপত্রঃ

 দারুচিনীর দ্বীপ নাকি নারিকেল জিঞ্জিরা ? 

স্থানীয়ভাবে এটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত, কারণ এখানে প্রচুর নারিকেল গাছ পাওয়া যায়। এছাড়া এটি দারুচিনি দ্বীপ নামেও পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ও নাটক 'দারুচিনি দ্বীপ' নির্মাণে দ্বীপ টির নাম দারুচিনির দ্বীপ নাম করন করা হয় ।   

খানে কি আর কিছু নেই , অবশ্যই রয়েছে । এখানে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ ।   সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণে একটি ছোট জনশূন্য দ্বীপ  রয়েছে , যা ছেঁড়া দ্বীপ বা সিরাদিয়া নামে পরিচিত। ভাটার সময় হেঁটেই মূল দ্বীপ থেকে সেখানে যাওয়া যায়।  

আরো রয়েছে , প্রবাল দ্বীপ । এই দ্বীপটি মূলত প্রবালের উপর ভিত্তি করে গঠিত, যা এটিকে পরিবেশগতভাবে অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তুলেছে। এখানে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে প্রবাল প্রাচীর, বেশ সমৃদ্ধ।  


যেসব পর্যটন কেন্দ্র আপনাকে মুগ্ধ করবেঃ 



১. কেয়াবন (Mangrove Forest): 

দ্বীপের কিছু অংশে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা কেয়াবন (এক ধরনের ম্যানগ্রোভ) রয়েছে, যা পরিবেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই বনাঞ্চল উপকূল ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।  


২.সেন্ট মার্টিন লাইট হাউজ এবং পশ্চিম পাড়াঃ  

 পশ্চিম সৈকতের কাছাকাছি একটি পুরানো লাইট হাউজ (বাতিঘর) আছে। যদিও এটি এখন সক্রিয় নয় বা উপরে ওঠার অনুমতি নাও থাকতে পারে, তবুও এটি একটি উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক।


৩.পূর্ব সৈকত (Sunrise Beach):

 এটি দ্বীপের পূর্ব দিকের সৈকত ।  সূর্যোদয় (Sunrise) দেখার জন্য এই সৈকত আদর্শ।  খুব ভোরে উঠে এখানে গেলে দিগন্তে সূর্য ওঠার মনমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পাবেন।


৪.পশ্চিম সৈকত (Sunset Beach):

 এটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম দিকের সৈকত  ।  এই সৈকতটি সূর্যাস্ত (Sunset) দেখার জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত  । দিনের শেষে যখন সূর্য বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায়  , তখন এখানকার দৃশ্য অসাধারণ লাগে । 


শুনেছি  এখানে   হুমায়ন  আহামেদ  এর  কটেজও  নাকি  আছে , এটা সত্যি নাকি  গল্প ?




 

 সমুদ্র বিলাস ( হুমায়ন আহমেদ কটেজ ) 


'সমুদ্র বিলাস' সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পশ্চিম সৈকতের খুব কাছে সুন্দর একটি জায়গায় অবস্থিত। এটি জেটি ঘাট থেকে হেঁটে যেতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। এই কটেজটির প্রধান আকর্ষণ হলো এটি সমুদ্রের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত রিসর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম, যেখান থেকে সূর্যাস্তের চমৎকার দৃশ্য উপভোগ করা যায়।  

এই কটেজটি নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত পছন্দের জায়গা ছিল। তিনি এখানে বসে বহু সাহিত্য রচনা করেছেন এবং বহু সময় কাটিয়েছেন। এটি তাঁর সাহিত্যপ্রেমী পাঠকদের জন্য একটি তীর্থস্থানের মতো।   


বর্তমানে সমুদ্র বিলাস একটি কটেজ আকারে বেশ পরিচিত । এ কটেজে কিছু রুম রয়েছে ।যেগুলো হুমায়ন আহমেদ এর নাটকের  নাম বা লেখকের বিখ্যাত উপন্যাসের  নাম থেকে রাখা হয়েছে ঃ 

  • দারুচিনির দ্বীপ
  •  শ্রাবণ মেঘের দিন
  • হিমুর মধ্যদুপুর
  • কোথাও কেউ নেই
  • শঙ্খনীল কারাগার (বিশেষত দ্বিতল ঘরটি, যেখান থেকে বসে সমুদ্র দেখা যায়)



 আসুন এবার সৈকতে সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ  এবং বারবিকিউ অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে নেই 

সেন্ট মার্টিনের প্রধান আকর্ষণ হলো তাজা সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ (BBQ)। সন্ধ্যাবেলা সৈকতে আপনার পছন্দের মাছ বেছে নিয়ে বারবিকিউ করে খাওয়ার অভিজ্ঞতাটি দুর্দান্ত।

আপনারা বিভিন্ন ধরনের মাছ যেমনঃ  রূপচাঁদা , লবস্টার, কাঁকড়া এবং স্থানীয় সুস্বাদু বোল মাছ 
বেছে নিতে পারেন ।  


 

 সেন্ট মার্টিনে আপনার সেরা ঠিকানা: কোথায় থাকবেন, কেমন হবে তার  বাজেট? 

ক্যাটাগরি                 সম্ভাব্য বাজেট (প্রতি রাত, সিজনে)               আপনার জন্য কোথায় থাকা উচিত

বিলাসিতা ও প্রিমিয়াম          ৪,০০০ টাকা – ১০,০০০+ টাকা                   পশ্চিম সৈকতের সি-ভিউ                                                                                                                             রিসোর্টগুলোতে। এখানে                                                                                                                         নিরিবিলি পরিবেশ, ব্যক্তিগত সৈকত                                                                                                       সুবিধা এবং ভালো পরিষেবা পাওয়া যায়।  



মধ্যম বাজেট ও মানসম্মত       ২,৫০০ টাকা – ৪,০০০ টাকা                 পূর্ব সৈকতের মাঝারি                                                                                                                             আকারের কটেজগুলো বা                                                                                                                             পশ্চিম সৈকত থেকে সামান্য                                                                                                                         ভেতরের দিকে অবস্থিত ভালো                                                                                                                                 হোটেলগুলো।
   


কম বাজেট ও সাশ্রয়ী              ১,০০০ টাকা – ২,৫০০ টাকা       জেটি সংলগ্ন এলাকার গেস্ট হাউজ                                                                                                                 বা কটেজগুলোতে। তবে এই                                                                                                                     ক্ষেত্রে সি-ভিউ বা নীরব পরিবেশ                                                                                                                                 আশা করা কঠিন। 




  ভ্রমণের আগে যেসব তথ্য না  গুরুত্বপূর্ণঃ 

অগ্রিম বুকিং: নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। এই সময়ে ভ্রমণ করলে কমপক্ষে এক মাস আগে থেকে স্থান বুক করে নিতে হয় । 

বিদ্যুৎ: সেন্ট মার্টিনে সাধারণত জেনারেটরের মাধ্যমে সীমিত সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় (যেমন: সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত)। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে কিনা সেটি নিশ্চিত হয়ে নিন ।

পানির সমস্যা:  সিজনে অনেক সময় মিষ্টি পানির কিছুটা সমস্যা হতে পারে। আপনার হোটেলে পানির সরবরাহ কেমন, তা জেনে নিন। 
   




 সেন্ট মার্টিনে কিভাবে যাবেন? (জাহাজ, বাস ও ট্রলার রুট) 


সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সরাসরি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে কোনো জাহাজ যায় না। আপনাকে প্রথমে সড়কপথে টেকনাফ যেতে হবে, এবং সেখান থেকে জাহাজে সেন্ট মার্টিন যেতে হবে। 

 প্রথমে আপনাকে  কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে হবে ।  এজন্য আপনাকে খুব  ভোরে (সকাল ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে) কক্সবাজার ত্যাগ করতে হবে। আপনার গন্তব্য হবে  টেকনাফের দমদমিয়া জেটি ।  আপনি লোকাল বাস, সিএনজি (CNG) বা রিজার্ভ ট্যাক্সিতে যেতে পারেন। আপনার যেতে  প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগবে। 
 এরপর  আপনাকে  টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের  (জলপথ) দমদমিয়া  জেটি থেকে  জাহাজে  উঠতে হবে ।  ঐখানে  শুধুমাত্র পর্যটকবাহী  জাহাজ বা  সি-ট্রাক  (যেমন: কেয়ারি সিন্দাবাদ, এমভি পারিজাত) সেন্ট মার্টিনে আপনাকে নিয়ে যেতে পারবে ।  সাধারণত  সকাল  ৯:০০ থেকে  ৯:৩০-এর  মধ্যে জাহাজগুলো সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।  জাহাজে সেন্ট মার্টিনে পৌঁছাতে প্রায় ২ থেকে ২.৫ ঘণ্টা সময় লাগবে।







বিদায় নয় আবার আসার আমন্ত্রণ রইল 



 "আপনার সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?  নিচে কমেন্টে আমাদের জানাতে ভুলবেন না!  আর আপনি যদি এখনো ভ্রমণের পরিকল্পনা না করে থাকেন, তবে আর দেরি কেন? নীল জলরাশি আপনার অপেক্ষায় রয়েছে।"  



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনার রিভিউটি লিখুন: এই পোস্টের কোন 'অপ্রকাশিত' ধারণাটি আপনার জীবনের কোনো দিককে প্রভাবিত করতে পারে?

comment url

Ayan Sani
Ayan Sani
আমি একজন ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট এবং আপনাদের ডেডিকেটেড ইঞ্জিনিয়ার। বিগত ৫ বছরের অভিজ্ঞতায়, আমি শিক্ষার্থীদের অনলাইনে সফল ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করে আসছি। আমার ওয়েবসাইটে আপনি অনলাইন ইনকাম, ব্লগিং, SEO (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং সর্বশেষ টেকনোলজি সম্পর্কিত নিয়মিত এবং তথ্যনির্ভর লেখা খুঁজে পাবেন। আমার লক্ষ্য হলো: 'Exploring The Untold' প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অজানা বিষয়গুলো তুলে ধরে আপনাকে অনলাইন জগতে সফলতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।